কয়েক হাজার বছর আগে থেকেই মিসরীয় ও আরবীয় রূপচর্চার একটি বিশেষ উপাদান এটি। ব্রাজিল আর কলোম্বিয়ার মেয়েরা অনেক দিন ধরেই ত্বকের সুরক্ষায় ওটস ব্যবহার করছেন। পশ্চিমের বেশ কয়েকটি দেশে স্কিন কেয়ার পণ্যের প্রধান উপাদান হিসেবে এর প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে। এদিকে আমাদের দেশে কিছু এথিক্যাল স্কিন কেয়ার ব্র্যান্ড ওটস দিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করছে, যা ইতিমধ্যেই বেশ প্রশংসিত।
ঘরোয়াভাবে সুন্দর, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বক আর চুলের জন্য ব্যবহার করতে পারেন ওটস দিয়ে বানানো মাস্ক ও স্ক্রাব।
ওটসে আছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি উপাদান। এ ছাড়া আছে জিংক যা ব্রণের যম। ওটস ত্বকের অতিরিক্ত তেল শোষণ করতে পারে, যা ব্রণ সারাতে সহায়তা করে। এ জন্য ব্যবহার করে দেখতে পারেন ইনস্ট্যান্ট ওটসমিল মাস্ক। এটি বানাতে লাগবে শুধু ওটসের ময়দা আর পানি। দুটি মিশিয়ে বানিয়ে ফেলুন একটি মিশ্রণ। এটি মুখে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।এ ছাড়া সিদ্ধ ওটসের সঙ্গে টমেটো মিশিয়েও বানাতে পারেন ব্রণ নিরোধক মাস্ক।
ওটসে আছে বিটা গ্লুক্যান। এর আছে ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে আর্দ্রতা ধরে রাখার গুণ। ওটস থেকে আর্দ্রতা পেতে মুখে লাগাতে পারেন খুব সহজ একটি মাস্ক। এটি বানাতে লাগবে এক টেবিল চামচ ওটসের গুঁড়া, এক টেবিল চামচ দুধ আর দুই চামচ মধু। সবকটি উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে মিশ্রণ বানিয়ে সেটি ১৫ থেকে ২০ মিনিট মুখে লাগিয়ে রেখে প্রচুর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে তিন দিন রাতে ঘুমানোর আগে লাগালে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
ত্বকের অতিমাত্রার শুষ্কতার জন্য কখনো কখনো চুলকানি অনুভূত হয়। এ রকম ত্বকে পিএইচের মাত্রা অনেক বেশি থাকে। ওটস ত্বকের এই শুষ্কতা কমাতে পারে। সঙ্গে ত্বকের সঠিক পিএইচ মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।এক বালতি পানিতে এক কাপ ওটস আর এক চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে ৩০ মিনিট রেখে দিন। চাইলে এতে নিজের পছন্দের যেকোনো অ্যাসেন্সিয়াল অয়েল মেশাতে পারেন। কয়েক ফোঁটা নারিকেল বা জলপাই তেলও দেওয়া যেতে পারে। এই পানি দিয়ে গোছল করলে এক সপ্তাহের ভেতর ত্বকের রুক্ষতা এবং চুলকানি ভাব কমে আসবে।
ওটস একটি আদর্শ এক্সফোলিয়েটর। খুব কোমলভাবে ত্বকের মৃতকোষ দূর করতে এর জুড়ি মেলা ভার। অনেক উপায়ে ওটস দিয়ে স্ক্রাব বা এক্সফোলিয়েটর বানানো যায়। এখানে সব ধরনের ত্বকের জন্য মানানসই এমন একটি স্ক্রাব বানানোর রেসিপি দেওয়া হলো, দুই টেবিল চামচ ওটের সঙ্গে এক টেবিল চামচ মধু, দুই টেবিল চামচ আপেল পিউরি আর সামান্য গোলাপ জল মিশিয়ে ঘন মিশ্রণ বানিয়ে সেটা খুব ভালো করে মুখে লাগিয়ে ম্যাসাজ করতে হবে। প্রায় ৫ মিনিট ম্যাসাজ করে, ১০ মিনিট মিশ্রণটি মুখে রেখে দিতে হবে। তাহলে উপকরণগুলোর সব পুষ্টিগুণ ত্বকের গভীরে প্রবেশ করবে। এরপর হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার ব্যবহার করলেই হবে। এটি হাতে পায়েও লাগানো যাবে।
ওটসে আছে স্যাপোনিন। এটি নিমেষেই ত্বকের রোমকূপ থেকে ময়লা, বাড়তি তেল পরিষ্কার করতে পারে। ওটসের সঙ্গে পানি মিশিয়ে দুধ বানানো যায়। এই দুধ তুলার সাহায্যে মুখে লাগিয়ে ত্বক পরিষ্কার করা যায়।
যেহেতু ওট অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি আর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদানে সমৃদ্ধ, সেহেতু খুশকি দূর করতে এটি ব্যবহার করলে বিশেষ উপকার পাওয়া যাবে। এ জন্য আধা কাপ ওটসের সঙ্গে আধা কাপ পানি এবং এক টেবিল চামচ লেবুর রস ও এক চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে একটি মাস্ক বানান। মাস্কটি খুব ভালো করে ভেজা চুলে মাথার তালুতে লাগিয়ে রেখে দিন ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট। এভাবে সপ্তাহে এক বা দুই লাগালে মাত্র এক মাসেই ভালো ফল পেতে শুরু করবেন।
ওটস চুলের গোড়া মজবুত করে চুল পড়া কমাতে ও প্রতিরোধ করতে পারে। আধা কাপ ওটসের গুঁড়ার সঙ্গে দুই টেবিল চামচ নারিকেলের দুধ আর এক টেবিল চামচ আমন্ড বাদামবাটা মিশিয়ে মাস্ক তৈরি করুন। এই মাস্ক চুলকে ভেতর থেকে শক্ত ও মজবুত করবে। এটি সপ্তাহে একবার লাগালেই চলবে।
ছবি: পেকজেলসডটকম