মরক্কোর আরগান গাছ থেকে আরগান ওয়েলের নির্যাস বের করা হয়। এই তেল কিন্তু ‘লিকুইড গোল্ড’ নামেও পরিচিত। নাম শুনে নিশ্চয়ই বুঝতেই পারছেন যে, এই তেলের গুণাগুণ অনেক। আরগান ওয়েল নানান রকম ভিটামিন, মিনারেলস এবং ফ্যাটি অ্যাসিডে ভরপুর। এই উপাদানগুলো চুলের গভীর থেকে পুষ্টি যুগিয়ে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। বাজারে এখন নানান ব্র্যান্ডের আরগান ওয়েল পাওয়া যায়। যেকোনো একটি ভালো ব্র্যান্ডের আরগান ওয়েল কিনে নিতে পারেন। খাঁটি আরগান ওয়েল স্ক্যাল্প ভালো রাখে, চুলের ড্যামেজ কমায় এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত আরগান ওয়েল ব্যবহার করলে চুল আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ঘন, মজবুত, সুন্দর ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল থাকে।
এই তেল কিছুটা ভারী প্রকৃতির হওয়ায় চুল থেকে ধুয়ে ফেলতে সময় বেশি লাগে। তাই এই তেল সবসময় ক্যাস্টর ওয়েল, নারিকেল তেল বা জোজোবা তেলের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করা ভালো। ক্যাস্টর ওয়েলে আছে ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড। এই ফ্যাটি অ্যাসিডটি চুল গজাতে সাহায্য করে এবং চুলের ফলিকলে জ্বালাপোড়া কমায়। এছাড়াও এই তেলটি স্ক্যাল্পে রক্তসঞ্চালন বাড়ায় যা স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল পেতে সাহায্য করে। ক্যাস্টার ওয়েল পুরো চুলে ব্যবহার না করে স্কাল্পে কিছু কিছু অংশে বিশেষ করে যেসব জায়গায় চুল কম সেসব জায়গায় ও চুলের আগায় ব্যবহার করা উচিত। এতে করে চুলের আগা ফাটার সমস্যা দূর হবে এবং নতুন চুল গজাবে। এই তেল মাসে মাত্র একবার ব্যবহারে স্বাভাবিকের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি চুল বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
আগে আমাদের দেশে অনেকেই এই তেলের সঙ্গে তেমন একটা পরিচিত না হলেও বর্তমানে এই তেল অনেকেই চিনেন। বিভিন্ন সুপারশপ, কসমেটিকস এর দোকান বা অনলাইন পেইজে জোজোবা ওয়েল পেয়ে যাবেন। জোজোবা ওয়েলে আছে ভিটামিন বি, সি, ই, কপার এবং জিংক। এই উপাদানগুলো চুলে পুষ্টি জোগাতে সাহায্য করে। এছাড়াও জোজোবা ওয়েল স্ক্যাল্পে রক্তসঞ্চালন বাড়ায়, পুষ্টি যোগায় এবং চুলের ফলিকল শক্ত, মজবুত করে চুলের বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। তাই নিয়মিত চুলে জোজোবা ওয়েল ব্যবহারে চুল হয় ঘন ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। আঙুলের ডগায় এই তেল নিয়ে স্ক্যাল্পে ভালোভাবে ম্যাসাজ করে ৩০ মিনিট অথবা রাতভর রেখে দিয়ে ভালো করে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২-৩ দিন ব্যবহারে তফাৎটা নিজেই বুঝতে পারবেন।
এই তেলে আছে কারনোসিক অ্যাসিড যা রক্তসঞ্চালনে সাহায্য করে। আর নতুন চুল গজাতে স্ক্যাল্পে রক্তসঞ্চালন হওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ যথাযথ রক্তসঞ্চালন ছাড়া নতুন চুল গজানোর জন্য ফলিকলগুলো ঠিকঠাকভাবে পুষ্টি যোগাতে পারে না। প্রতিবার শ্যাম্পু করার সময় ৪-৫ ফোঁটা রোজমেরি ওয়েল শ্যাম্পুতে মিশিয়ে শ্যাম্পু করে নিন। নিয়মিত ব্যবহারে ভালো ফলাফল পাবেন। এছাড়াও নারিকেল তেল, তিলের তেল বা অলিভ তেলের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা রোজমেরি ওয়েল নিয়ে স্ক্যাল্পে ভালো মতো ম্যাসাজ করে নিন। ১-২ ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে নিন বা সারারাত রেখে পরের দিনও তুলে ফেলতে পারেন।
অলিভ ওয়েল মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন ই এবং কে ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এই সব উপাদানগুলোই স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল পেতে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এছাড়াও এই উপাদানগুলো চুলের ফলিকলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পৌঁছাতে সাহায্য করে। অলিভ ওয়েলে রয়েছে সুরক্ষা সম্বলিত উপাদান জ সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির ক্ষতি থেকে চুলকে ২০% পর্যন্ত সুরক্ষা দিয়ে থাকে। এতে রয়েছে এসপিএফ ৮ সমপরিমাণ সানস্ক্রিন। তাই অনেক সময় তেল দিয়ে বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হলেও, নির্দ্বিধায় অলিভ ওয়েল ব্যবহার করতে পারেন।
আমান্ড ওয়েল বা কাঠ বাদাম তেলে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই যা প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যখন বাইরের দূষণ এবং ধুলাবালি থেকে চুলকে সুরক্ষা দেয়, তখন চুল থাকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও ঝলমলে। চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত নিয়মিত এই তেল ব্যবহার করা ছাড়াও মাঝে মাঝে চুলের প্যাকের সঙ্গেও ব্যবহার করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ২ টেবিল চামচ নারিকেল তেলের সঙ্গে ১ টেবিল চামচ আমান্ড ওয়েল মিশিয়ে এর সঙ্গে কোলা বা অ্যাভোকাডো নিয়ে একটি হেয়ার মাস্ক তৈরি করে নিন। এরপর ভালোভাবে স্ক্যাল্পে লাগিয়ে ৪০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত দুই দিন ব্যবহারে চুল হবে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল।
নারিকেল তেলে রয়েছে নানান ধরনের উপকারী ফ্যাটি অ্যাসিড। এতে থাকা স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও লিউরিক অ্যাসিড চুলের গভীর থেকে পুষ্টি জোগায় এবং দূষণ, ধুলাবালি থেকে চুলকে রক্ষা করে। সপ্তাহে অন্তত ২-৩ দিন নারিকেল টেল গরম করে আঙুলের ডগা দিয়ে স্ক্যাল্পে ভালোভাবে ম্যাসাজ করে শ্যাম্পু করে নিন। এতে করে চুল যেমন ঝলমলে সুন্দর হবে, তেমনি চুলের ডগা ফাটার সমস্যা দূর হবে এবং স্ক্যাল্পে রক্তসঞ্চালন বাড়বে যা চুল লম্বা করতে সাহায্য করবে। এছাড়াও যাদের অনেক খুশকির সমস্যা আছে তারাও নারিকেল তেল গরম করে ব্যবহার করলে উপকার পাবেন। এতে থাকা অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল প্রোপার্টিজ খুশকি দূর করতে সাহায্য করে।