জবা ফুল যুগ যুগ ধরে আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। চুলের যত্নে ব্যবহৃত হয় জবা। জবা ফুলে রয়েছে প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ, প্রোটিন, ভিটামিন, ফ্যাটি অ্যাসিড ও ফ্ল্যাভোনয়েড। এগুলো আমাদের ত্বকের জন্যও বেশ উপকারী। তাই রূপ-রুটিনে চুলের পাশাপাশি ত্বকের যত্নেও রাখতে পারেন জবা।
প্রাকৃতিক অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট
জবা ফুলের নির্যাস প্রাকৃতিক অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এর নির্যাস ত্বকে কোলাজেনের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং মেলানিন সংশ্লেষণ হ্রাস করতে পারে, যা ইউভিবি বিকিরণের অতিরিক্ত সংস্পর্শের কারণে ঘটে। সহজ কথায়, এটি ইউভি রশ্মি ও অতিরিক্ত দূষণের কারণে ত্বকে বয়সের ছাপ বিলম্বিত করতে সহায়তা করে। দাগও কমায়।
ত্বকের যেকোনো ক্ষত নিরাময়ে
জবা ত্বকের যেকোনো ক্ষত নিরাময়ে বেশ ভালো কাজ করে। কারণ, এটি ত্বকের কোষগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে খুব সহজেই এবং কোষগুলোকে হাইড্রেটেড রাখে। এ ছাড়া জবা কেরাটিনোসাইটসের বিস্তারকে ত্বরান্বিত করতে পারে, যা ত্বকের প্রদাহ রোধ করে, ত্বককে সজীব রাখে।
বলিরেখা দূর করতে
যেহেতু জবা অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি–সমৃদ্ধ, তাই এটি ত্বকে কোলাজেন উৎপাদন করতে পারে। এটি ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা ধরে রেখে বলিরেখা দূর করতে সহায়তা করে। এ ছাড়া জবা হাইপারপিগমেন্টেশনের হাত থেকেও ত্বককে রক্ষা করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জবা ফুলের নিয়মিত ব্যবহার বোটক্স চিকিৎসার বিকল্প হিসেবে প্রাকৃতিক সমাধান।
ত্বকের প্রদাহ হ্রাস করতে
জবা ফুলে অ্যান্থোসায়ানিন নামক অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বা প্রদাহরোধী বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ। এটি ত্বকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস আর যেকোনো ধরনের প্রদাহ হ্রাস করতে পারে।
ব্রণ নিরাময়ে
ব্রণ নিরাময়ে ব্যবহার করতে পারেন জবার ফেস মাস্ক। ফেস মাস্কটি তৈরি করতে প্রয়োজন হবে জবার পাউডার ২ টেবিল চামচ, অ্যালোভেরা জেল বা দই ১ চা–চামচ, লেবুর রস ১ চা–চামচ। উপকরণগুলো একসঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে মুখে এবং গলায় প্রয়োগ করে দুই মিনিট রেখে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। তবে আপনার ত্বক সংবেদনশীল হলে লেবু এড়িয়ে চলুন।
ময়েশ্চারাইজার
ময়েশ্চারাইজার হিসেবেও কিন্তু বেশ ভালো কাজ করে জবা। এর জন্য প্রয়োজন হবে ২০-৩০টি জবার শুকনো পাপড়ি, অলিভ অয়েল কিংবা বাদামের তেল ২ টেবিল চামচ আর অ্যালোভেরা জেল ১ টেবিল চামচ। শুকনো পাপড়িগুলোর সঙ্গে তেল মিশ্রিত করে ভালোভাবে পিষে নিন। এরপর মিশ্রণটি মাইক্রোওয়েভে ২-৩ মিনিটের জন্য রেখে একটি ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে নিন। এবার মিশ্রণটিতে অ্যালোভেরা জেল ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। ব্যস আপনার জবা ফুলের প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার প্রস্তুত।
এক্সফোলিয়েটর
এক্সফোলিয়েটর হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন জবা। এটি ত্বকের মৃত কোষগুলোকে অপসারণ করে ত্বককে করে তুলবে সুন্দর ও মসৃণ। এর জন্য প্রয়োজন হবে চিনি ১ টেবিল চামচ, মধু ১ টেবিল চামচ এবং জবা ফুলের পাউডার ১ টেবিল চামচ। উপকরণগুলো একসঙ্গে মিশ্রিত করুন এবং গোসলের সময় ভেজা ত্বকে আলতো করে প্রয়োগ করুন। প্রায় ৫ মিনিট বৃত্তাকার গতিতে এটি ত্বকে ম্যাসাজ করে নিন এবং ঠান্ডা পানি ব্যবহার করে ধুয়ে ফেলুন।
জবার চা
শুধু বাইরে থেকেই নয় বরং ভেতর থেকে ত্বককে ভালো রাখতে পান করতে পারেন জবার চা। এই চা শরীর এবং ত্বকের পাশাপাশি মনকেও রাখবে ভালো। এর জন্য প্রয়োজন হবে শুকনো জবা ফুল আদা কাপ, পানি ৮ কাপ, মধু এক–চতুর্থাংশ কাপ এবং লেবুর রস ৩ টেবিল চামচ।
ত্বকের যত্নে খুব সহজেই ব্যবহার করতে পারেন জবা। তবে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো সম্পর্কে জেনে রাখা ভালো।
প্রায় ৭২০ সপ্তাহের জন্য প্রতিদিন ৬ মিলি পর্যন্ত জবার চা পান নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত হয়। নির্ধারিত পরিমাণ অতিক্রম করলে পেট খারাপ, গ্যাস এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া আপনি যদি গর্ভবতী হন বা শিশুকে বুকের দুধ পান করিয়ে থাকেন, তবে এই চা পান থেকে বিরত থাকুন। জবা আপনার রক্তে শর্করার মাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে। সুতরাং, অস্ত্রোপচারের কমপক্ষে দুই সপ্তাহ আগে এবং পরে এটি এড়িয়ে চলুন।
জবাফুল ত্বকের অ্যালার্জির কারণও হতে পারে। তাই প্যাচ টেস্ট না করে এটি ত্বকে ব্যবহার না করাই ভালো।
তথ্যসূত্র: হেলথলাইন