ছেলেদের সৌন্দর্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ চুল। ত্বকের যত্নের ব্যাপারে অনীহা থাকলে চুলের যত্নের ব্যাপারে তাঁরা কিন্তু বেশ সচেতন। তবে অনেকেই চুলের যত্ন বলতে কেবল রোজ শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করা বোঝেন। ঝলমলে সুন্দর স্বাস্থ্যকর চুল পেতে হলে শুধু শ্যাম্পু করলেই চলবে না, বাড়তি যত্নেরও দরকার আছে। এই যত্নের জন্য খুব বেশি সময় ব্যয়ের প্রয়োজন নেই।
অতিরিক্ত পরিষ্কার না করা: চুলের যত্নের ব্যাপারে সাধারণ যে ভুলটি সবচেয়ে বেশি করা হয় তা হলো, অতিরিক্ত পরিষ্কার করা। সপ্তাহে দুই বা তিনবার কিংবা এক দিন পরপর শ্যাম্পু করাই যথেষ্ট। অন্যদিন পানি দিয়ে পরিষ্কার করলে চলবে। এতে চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে আর মাথার ত্বক প্রয়োজনীয় তেল হারাবে না।
আলতো করে শুকিয়ে নেওয়া: চুল ধোয়ার পর গামছা বা তোয়ালে দিয়ে আলতো করে মুছে ফেলতে হবে। বেশি জোরে ঘষা যাবে না। কারণ, ভেজা চুল বেশ দুর্বল থাকে। বেশি জোরে ঘষে মুছলে চুল পড়তে শুরু করে। তাই হালকা করে ঘষে ফ্যানের বাতাসে শুকিয়ে নিতে হবে।
হেয়ার ক্রিম বা জেলের বদলে অ্যালোভেরা জেল:ছেলেদের চুলের স্টাইলিংয়ের জন্য বাজারে অনেক ধরনের হেয়ার ক্রিম বা জেল পাওয়া যায়। এতে অনেক ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকে, যা দীর্ঘদিন ব্যবহারে চুলের ক্ষতি হতে পারে। এর খুব ভালো বিকল্প হিসেবে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারেন। চুলের স্টাইলিংও হবে, আবার পুষ্টিও জোগাবে।
সপ্তাহে অন্তত দুই দিন তেল দেওয়া:সুস্থ ও সুন্দর চুলের জন্য সপ্তাহে অন্তত দুই দিন তেল দেওয়া উচিত। চুলের তেল বলতে আমাদের দেশে সবাই নারকেল তেলকেই বোঝায়। কিন্তু এখন চুলের যত্নে আরও অনেক ধরনের তেল ব্যবহার করা যায়। যেমন জলপাই তেল, আমন্ড তেল, আর্গান তেল। এগুলো চুলের পুষ্টি জোগাতে বেশ ভালো ভূমিকা রাখতে পারে।
চুল পড়লে পেঁয়াজের রস: ছেলেদের চুলের সবচেয়ে সাধারণ সমস্যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চুল পড়া। এই চুল পড়া রোধে পেঁয়াজের রস ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে রয়েছে সালফার, যা চুল ভেঙে যাওয়া ও পাতলা হওয়া রোধ করে। এ ছাড়া এটি নতুন করে চুল গজাতে সাহায্য করে। পেঁয়াজের রসে আরও আছে নানা ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা অল্প বয়সে চুল পেকে যাওয়ার সমস্যা প্রতিরোধ করতে পারে। অতিরিক্ত চুল পড়ার সমস্যা থাকলে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার যেকোনো তেলের সঙ্গে মিশিয়ে পেঁয়াজের রস ব্যবহার করতে হবে।
খুশকির সমাধান হোক টি ট্রি অয়েলে:ছেলেদের চুলের খুশকি হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি। এর সমাধান হিসেবে টি ট্রি অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে টি ট্রি অয়েল অনেক শক্তিশালী অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ও অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি উপাদানে ভরপুর, যা খুশকি প্রতিরোধের ক্ষমতা রাখে। নারকেল বা অন্য যেকোনো তেলে কয়েক ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে সপ্তাহে দুই দিন ব্যবহার করলে খুশকির সমস্যা কমে আসবে।
ডিমের মাস্ক: চুলের স্বাস্থ্যের জন্য ডিম খুবই উপকারী। এতে রয়েছে সালফার ও প্রোটিন, যা চুলের ফলিকল মজবুত করে ও নতুন চুল গজাতে ভূমিকা রাখে। সপ্তাহে অন্তত একবার চুলের ডিমের মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। চুলের গোড়া শক্ত হওয়ার পাশাপাশি চুল ঝলমলে ও নরম হবে।
শক্ত করে চুল না বাঁধা বা ক্যাপ না পরা:অনেকেই কাজের খাতিরে বা স্টাইল করতে ক্যাপ পরেন। এই ক্যাপ খুব শক্ত করে পরা যাবে না। এতে ‘ট্র্যাকশন অ্যালোপেশিয়া’ হয়ে চুল পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। একই কথা চুল বাঁধার ক্ষেত্রেও খাটে। লম্বা চুল যাঁদের আছে, তাঁরা শক্ত করে পনিটেইল করা এড়িয়ে চলুন।
ট্রিম করা:চুল পরিপাটি রাখতে ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ পরপর ট্রিম করতে হবে।
সঠিক ডায়েট: চুলের সুস্থতায় ডায়েটও অনেক জরুরি। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, শাকসবজি, বাদামের মতো পুষ্টিকর খাবার রোজকার খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত। নিয়মিত শরীরচর্চা করা বা ৩০ মিনিট হাঁটতে হবে। এর পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও নজর দিতে হবে। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা যাবে না। নিয়মিত আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।
ছবি: হোলাগো, ইনস্টাগ্রাম ও পেকজেলসডটকম