চুল প্রতিনিয়ত প্রাণ হারাচ্ছে, এই ভুলগুলো করছেন না তো?
শেয়ার করুন
ফলো করুন

গোসলের পর ভেজা চুলের ওপর চলে প্রচুর অত্যাচার। না জেনেই এ সময় যেসব ভুল করি আমরা, সেগুলো এবার জেনে নেওয়া যাক। লিখেছেন কানিজ ফাতেমা।
চুলের সমস্যা নিয়ে অভিযোগ নেই, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বেশ মুশকিল। আর একজন মানুষ তার সাজপোশাক নিয়ে কতটুকু সচেতন, সে পরিচয় পাওয়া যায় তার চুলেই। কিন্তু ট্রেন্ডে গা ভাসিয়ে আমরা চুলের স্টাইলিং করতে গিয়ে মাঝেমধ্যে না বুঝেই চুলের বারোটা বাজিয়ে বসে থাকি।

গোসলের পর ভেজা চুলের ওপর চলে প্রচুর অত্যাচার
গোসলের পর ভেজা চুলের ওপর চলে প্রচুর অত্যাচার

ব্লিচিং, বিভিন্ন হেয়ার ট্রিটমেন্ট, কার্ল, পার্ম বা ডাই—এসব করতে গিয়ে আমরা ভুলেই যাই, চুল কতটুকু সইতে পারবে। আবার ঠিকঠাক যত্নের পরও আগা ফেটে যাওয়া, চুল ভেঙে যাওয়ার সমস্যায় ভুগতে থাকি অনেকে। কারণ, আমাদের স্পষ্টভাবে জানা নেই, চুলে কখন কী করা যায় আর কখন কী করতে নেই। চুল সবচেয়ে বেশি স্পর্শকাতর থাকে ভেজা অবস্থায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক ভেজা চুলে আমরা প্রায়ই যেসব ভুল করে চুলের সৌন্দর্য নষ্ট করছি প্রতিনিয়ত।

বিজ্ঞাপন

ভেজা চুল ঝাড়া, আঁচড়ানো ও ঘষে ঘষে মোছা

ভেজা চুল জোরে জোরে চুল ঝাড়া ও চুল আঁচড়ানো উচিৎ না
ভেজা চুল জোরে জোরে চুল ঝাড়া ও চুল আঁচড়ানো উচিৎ না

ভেজা চুলে যেসব ভুল আমরা সবচেয়ে বেশি করি, তা হলো, জোরে জোরে চুল ঝাড়া ও চুল আঁচড়ানো। তোয়ালে বা গামছার ঝাপটা দিয়ে চুলের পানি ঝাড়ার মতো আত্মঘাতী অভ্যাস আমরা উত্তরাধিকার সূত্রেই পেয়েছি মা-নানিদের কাছ থেকে। চুল শুকানোর এই পদ্ধতিতে আছে বিরাট গলদ। আমাদের চুলের ফলিকলগুলো সাধারণত খুব পাতলা টিস্যু দিয়ে তৈরি। তাই জোরে আঘাত করলে চুলের ফলিকলগুলো ফেটে যায়। তোয়ালে বা গামছা দিয়ে চুল ঘষে ঘষে মুছলেও একইভাবে চুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সুতি বা মাইক্রোফাইবারের তোয়ালে দিয়ে ভেজা চুল আলতোভাবে চেপে অতিরিক্ত পানি ঝরিয়ে নিলে এই সমস্যা এড়ানো যায়। আবার সৌন্দর্যবিশেষজ্ঞদের মতে, চুল সবচেয়ে বেশি ভঙ্গুর থাকে ভেজা অবস্থায়। তাই ভেজা চুল কোনো অবস্থাতেই আঁচড়ানো উচিত নয়। ভেজা চুলে ব্রাশ ব্যবহার করা যাবে না। যদি আঁচড়াতেই হয়, তবে মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে খুব ধীরে ধীরে আঁচড়াতে হবে।

বিজ্ঞাপন

উল্টে বাঁধা

ভেজা চুলে খোঁপা করে ফেললে বা পনিটেল বাঁধলে তা চুলের গোড়াকে নরম করে ফেলে
ভেজা চুলে খোঁপা করে ফেললে বা পনিটেল বাঁধলে তা চুলের গোড়াকে নরম করে ফেলে

ভেজা চুলের গোঁড়া এমনিতেই দুর্বল হয়। তাই ভেজা চুলে খোঁপা করে ফেললে বা পনিটেল বাঁধলে তা চুলের গোড়াকে নরম করে ফেলে। এতে চুল ভাঙা ও চুল পড়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। কারণ, এ সময় চুল সবচেয়ে বেশি টানটান হয়ে থাকে। এদিকে বাঁধা অবস্থায় পর্যাপ্ত বাতাস মাথার ত্বক বা স্ক্যাল্পে প্রবেশ করতে না পারায় ত্বকে প্রদাহ ও বিভিন্ন সমস্যা পর্যন্ত হতে পারে। চুলের আগায় শুষ্ক ভাব বেড়ে যায় এভাবে।

স্টাইলিং করতে বিভিন্ন যন্ত্রপাতির ব্যবহার

ভেজা চুল স্টাইলিং করা আর চুল পোড়ানো একই কথা
ভেজা চুল স্টাইলিং করা আর চুল পোড়ানো একই কথা

তাড়াহুড়ো করে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকাতে চাইলে বাধে আরও বড় বিপত্তি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভেজা চুল স্টাইলিং করা আর চুল পোড়ানো একই কথা। কারণ, ভেজা চুল তাপ বেশি টানে আর চুল পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এতে জটও বাঁধে প্রচুর। তাই চুলে পানি থাকা অবস্থায় হেয়ার স্ট্রেইটনার, কার্লার বা হিট স্টাইলিং সরঞ্জামগুলো ব্যবহার করা সম্পূর্ণ নিষেধ। হেয়ার স্টাইলিস্টরা উপদেশ দিয়ে থাকেন, ভেজা চুল প্রাকৃতিক বাতাসে মেলে শুকাতে।

হেয়ার প্যাক ব্যবহার

ভেজা চুলে হেয়ার প্যাক ব্যবহারে ফল পাওয়া যায় না
ভেজা চুলে হেয়ার প্যাক ব্যবহারে ফল পাওয়া যায় না

আমরা অনেকেই চুলে বেশ মানসম্পন্ন পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ প্যাক ব্যবহার করেও আশানুরূপ ফল পাই না। এর কারণ হতে পারে ভেজা চুলে হেয়ার প্যাক ব্যবহার। চুল ভেজা অবস্থায় প্যাক সবচেয়ে কম কার্যকর হয়। তাই সর্বোচ্চ ফলাফল পেতে চুল অন্তত ৮০ শতাংশ শুকানোর পর প্যাক ব্যবহার করতে হবে।

হেয়ার স্প্রে

ভেজা চুলে হেয়ার স্প্রে লাগানোর কিছুক্ষণ পর চুলের আকৃতি পরিবর্তন হতে থাকে
ভেজা চুলে হেয়ার স্প্রে লাগানোর কিছুক্ষণ পর চুলের আকৃতি পরিবর্তন হতে থাকে

ভেজা চুল আর শুকনা চুলের বৈশিষ্ট্য একেবারেই ভিন্ন রকমের হয়। অনেক সময় চুলের স্টাইল করতে হেয়ার স্প্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটি শুকনা চুলে লাগালে চুল সুরক্ষিত ও ঝরঝরে থাকে এবং স্টাইলিংও ভালো হয়। কিন্তু ভেজা চুলে হেয়ার স্প্রে লাগানোর কিছুক্ষণ পর চুলের আকৃতি পরিবর্তন হতে থাকে। এতে চুল আরও বেশি উষ্কখুষ্ক দেখায়।

তোয়ালেতে পেঁচিয়ে রাখা

ভেজা চুলে তোয়ালে জড়িয়ে রাখলে চুলের ক্ষতি হয়
ভেজা চুলে তোয়ালে জড়িয়ে রাখলে চুলের ক্ষতি হয়

অধিকাংশ সময়ই চুল দ্রুত শুকাবে ভেবে আমরা তোয়ালে জড়িয়ে রাখি। এতে চুলের ক্ষতি ছাড়া ভালো কিছুই হয় না। তোয়ালের শক্ত ফাইবারের সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে চুল ভেঙে যায়। বরং সুতির টি-শার্ট দিয়ে চুলের অতিরিক্ত পানি মুছে নেওয়া যেতে পারে।

ভেজা চুলে ঘুমাতে যাওয়া

ভেজা চুলে ঘুমাতে গেলে চুলে জট লেগে যায়
ভেজা চুলে ঘুমাতে গেলে চুলে জট লেগে যায়

সারা দিনের ক্লান্তি দূর করতে অনেকেই আমরা রাতে গোসল করে ঘুমাতে যাই। শরীর আরাম পেলেও চুল তখন ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ভেজা চুলে ঘুমাতে গেলে চুলে জট লেগে যাওয়া ও ভেঙে যাওয়ার পাশাপাশি মাথার ত্বকে জ্বালাপোড়া হতে পারে আর ছত্রাক জন্মাতে পারে। তাই শোবার আগে চুল বাতাসে শুকিয়ে নিতে হবে। ঝলমলে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল পেতে এসব নিয়ম মেনে চলার পাশাপাশি সিল্কের হেয়ার ক্যাপ বা সিল্কের বালিশের কভার ব্যবহার করা যায়।

তথ্যসূত্র: অ্যালিউর, এল ম্যাগাজিন।

ছবি: পেকজেলস

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৩, ০৪: ২৫
বিজ্ঞাপন