এ সময় চুল খুলে বৃষ্টিস্নান করতে ভালো লাগলেও এরপর বাধতে পারে বিপত্তি। কারণ, বেশিক্ষণ ভেজা চুলে থাকলে ঠান্ডা তো লাগবেই, সঙ্গে স্যাঁতসেঁতে হয়ে চুলের গোঁড়া নরম হয়ে চুল পড়ার আশঙ্কাও বাড়ে দিগুণ। বর্ষাকালে বাতাসে প্রচুর পরিমাণে আর্দ্রতা থাকে। এই অত্যাধিক আর্দ্রতা মাথার ত্বকে ময়লা আটকে রাখে।
ফলে চুলের ফলিকলগুলো দুর্বল হয়ে যায়। চুলের গোড়ায় জমা হওয়া ব্যাকটেরিয়া আর ছত্রাক খুশকির সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। আর ভেজা চুল ঠিকমতো না শুকালে উকুনের উপদ্রবও হয়। আপাতদৃষ্টে বিষয়গুলো ছোট মনে হলেও পরবর্তী সময়ে সৃষ্টি হতে পারে নানা ধরনের সমস্যা। তাই ঋতু অনুসারে চুলের যত্নের রুটিনে মন দিতে হবে।
বৃষ্টির পানি প্রায়ই অ্যাসিডিক হয়। যা চুলের ক্ষতি করতে পারে। বৃষ্টির বিরূপ প্রভাব থেকে চুল রক্ষা করতে জলরোধী হুডি পরতে হবে। আর যদি ভিজেও যান, তাহলে চুল যথাসম্ভব দ্রুত ও ভালোভাবে শুকিয়ে নিয়ে বেণি বা খোঁপা করে রাখুন। আর একটানা এসিতে থাকা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ, এসির ঠান্ডা বাতাসের স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া চুলের ভীষণ ক্ষতি করে।
চুল ও মাথার ত্বকে জমে থাকা ময়লা দূর করতে সপ্তাহে অন্তত দুই বা তিনবার চুল ধোয়া উচিত। তবে এর আগে চুলের অন্যতম খাবার তেল ব্যবহার করতে হবে। এ সময় চুলের যত্নে তেল ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর চুল পেতে হলে সপ্তাহে অন্তত দুই দিন ভালোভাবে তেল দিতে হবে। নারকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে নিতে পারেন আমন্ড, ক্যাস্টর ও তিলের তেল। এসব একসঙ্গে ব্যবহারে চুলের গোঁড়া শক্ত ও মজবুত তো হবেই, সঙ্গে নতুন চুলও গজাবে। এ ক্ষেত্রে ছুটির দিনে সপ্তাহে এক দিন চুলে হট অয়েল ম্যাসাজ করলে ভালো। এতে মাথার ত্বকে রক্তসঞ্চালন বাড়বে।
তেল ব্যবহারের পর ভালোভাবে শ্যাম্পু করতে হবে। চুলের গোড়ায় জীবাণু তৈরি হওয়া রোধ করতে একটি অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বা অ্যান্টিফাঙ্গাল শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। সব শেষে একটা ভালো কন্ডিশনার ব্যবহারে চুল হবে মজবুত। যেহেতু বর্ষায় আর্দ্রতার শতাংশ বেশি থাকে, তাই এ সময়ে চুল শুষ্ক রাখার জন্য বাড়তি যত্ন নেওয়া উচিত। তাই চুল ধোয়ার পরে শুকানোর জন্য একটি পরিষ্কার, নরম তোয়ালে ব্যবহার করতে হবে। সেটাও যেন শুকনা থাকে। ভেজা অবস্থায় চুল বাঁধবেন না; কারণ, এতে চুলের গোড়ার ক্ষতি হয়। চিরুনি ব্যবহারেও এ সময় খেয়াল রাখতে হবে। প্রশস্ত বা মোটা দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করলে আপনার চুলে সহজে জট ধরবে না, চুল পড়াও কমে যাবে।
বর্ষাকালে চুল পড়ার সমস্যা হলে ছোট চুলের স্টাইল করতে পারেন। আর এখন ছোট চুল বেশ ট্রেন্ডিও, নানাভাবে নিজেকে উপস্থাপনও করা যায়। চুল লম্বা হলে পড়ার আশঙ্কাও বেড়ে যায়। তবে ছোট করে কাটতে না চাইলে অন্তত চুলের আগা ছাঁটতে পারেন। এতে চুল আরও ভালোভাবে বৃদ্ধি পাবে। এবার আসা যাক, এ সময়ে চুল বাঁধা প্রসঙ্গে। বর্ষাকালে ন্যূনতম হেয়ারস্টাইলিংয়ের দিকে যাওয়াই ভালো। এ ক্ষেত্রে আপনি আপনার চুলের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী একটা টাইট বান, উঁচু পনিটেল বা ছোট বেণি করতে পারেন।
শুধু বাহ্যিক যত্নই চুলের জন্য যথেষ্ট না। চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে খাদ্যের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। চুল কত দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং কতটা স্বাস্থ্যকর হবে, তা নির্ভর করে বয়স, সামগ্রিক স্বাস্থ্য, জেনেটিকস, আবহাওয়া ও খাবারসহ অনেক কিছুর ওপর। বয়স ও জেনেটিকসের মতো কিছু কারণ পরিবর্তন করা সম্ভব না হলেও খাবারের ওপর অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ রয়েছে আমাদের। খাবারের মাধ্যমে পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব। গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন বি-১২ ও ডি, বায়োটিন, রাইবোফ্লাভিন, আয়রনসহ অন্যান্য পুষ্টির ঘাটতি চুল পড়ার সঙ্গে জড়িত। এর জন্য ডায়েটে ডিম, সবুজ শাক ও চর্বিযুক্ত মাছের মতো উচ্চ পুষ্টি রয়েছে, এমন খাবার রাখা উচিত। আর শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে পর্যাপ্ত পানিও পান করতে হবে।
ছবি: হাল ফ্যাশন ও পেকজেলসডটকম