চুল কত দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং কতটা স্বাস্থ্যকর হবে, তা নির্ভর করে বয়স, সামগ্রিক স্বাস্থ্য, জেনেটিকস, পরিবেশ, ওষুধ, খাবারসহ অনেক কিছুর ওপর। যদিও বয়স ও জেনেটিকসের মতো কিছু কারণ পরিবর্তন করা সম্ভব না, তবে খাবারের ওপর অবশ্যই আমাদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। খাবারের মাধ্যমে পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব। গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন বি-১২ ও ডি, বায়োটিন, রাইবোফ্লাভিন, আয়রনসহ অন্যান্য পুষ্টির ঘাটতি চুল পড়ার সঙ্গে জড়িত। এর জন্য ডায়েটে ডিম, সবুজ শাক ও চর্বিযুক্ত মাছের মতো উচ্চ পুষ্টি রয়েছে, এমন খাবার রাখা উচিত।
চুলের বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত প্রোটিন খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, চুলের ফলিকল বেশির ভাগ প্রোটিন দিয়ে তৈরি। ডায়েটে প্রোটিন ও বায়োটিনের অভাব হলে চুল পড়ে। তবে এর একটি দুর্দান্ত উৎস হলো ডিম, যা চুলের বৃদ্ধির জন্য দ্রুত পুষ্টি জোগায়। গবেষণায় দেখা গেছে, বায়োটিনের ঘাটতি আছে, এমন লোকদের চুলের বৃদ্ধি কম। ডিমে থাকা প্রোটিন ও বায়োটিন এর সামধান দিতে পারে।
ফোলেট, আয়রন, ভিটামিন এ এবং সি–এর মতো উপকারী পুষ্টিতে ভরপুর, টাটকা পালংশাক। গবেষণায় দেখা গেছে, চুলের বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন এ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এক কাপ (৩০ গ্রাম) পালংশাক আপনার দৈনিক ভিটামিন এ–এর চাহিদার ২০ শতাংশ পর্যন্ত সরবরাহ করবে।
চুলের বৃদ্ধির জন্য স্যামন, হেরিং ও ম্যাকেরেলের মতো চর্বিযুক্ত মাছ বেশ উপকারী। এতে রয়েছে ওমেগা-৩, ফ্যাটি অ্যাসিড, প্রোটিন, সেলেনিয়াম, ভিটামিন ডি-৩ ও বি। ডায়েটে তাই নিয়মিত চর্বিযুক্ত মাছ এবং ভিটামিন ডির অন্যান্য উৎস অন্তর্ভুক্ত করা ভালো।
মিষ্টি আলু বিটা-ক্যারোটিনের একটি বড় উৎস। শরীর এই যৌগটিকে ভিটামিন এ-তে রূপান্তর করে, যা চুলের স্বাস্থ্যের সঙ্গে যুক্ত। একটি মাঝারি মিষ্টি আলুতে (প্রায় ১১৪ গ্রাম) পর্যাপ্ত বিটা ক্যারোটিন থাকে, যা দৈনিক ভিটামিন এ–এর চাহিদার ১৬০ শতাংশ পর্যন্ত সরবরাহ করতে পারে। শরীরে ভিটামিন এ–এর অভাব হলে চুল পড়তে পারে। তবে অত্যধিক ভিটামিন এ চুল পড়ারও কারণ হতে পারে।
চুলের বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান রয়েছে বাদামে। যেমন এক আউন্স (২৮ গ্রাম) বাদাম আপনার দৈনিক ভিটামিন ই–এর চাহিদার ৪৮ শতাংশ পূরণ করবে। এ ছাড়া বাদাম ভিটামিন বি, জিংক এবং প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিডও সরবরাহ করে। চুলের বৃদ্ধি ছাড়াও বাদামে অন্যান্য স্বাস্থ্য উপকারিতাও রয়েছে। যেমন হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে বাদাম। তাই দৈনন্দিন ডায়েটে বাদাম রাখা ভালো।
চুলের বৃদ্ধির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার হলো বীজ। এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন ই, জিংক এবং সেলেনিয়াম। এক আউন্স (২৮ গ্রাম) সূর্যমুখী বীজ আপনার দৈনন্দিন ভিটামিন ই চাহিদার প্রায় ৫০ শতাংশ পূরণ করবে।
এ ছাড়া ফ্ল্যাক্সসিড এবং চিয়াবীজের মতো কিছু বীজও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সরবরাহ করে।
মটরশুঁটি প্রোটিন ও জিংকের একটি বড় উদ্ভিদভিত্তিক উৎস, যা চুলের বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। একই সঙ্গে চুলের মেরামত চক্রকেও সহায়তা করে মটরশুঁটি। ৩.৫ আউন্স (১০০ গ্রাম) কালো মটরশুঁটি একজন নারীর দৈনিক জিংক চাহিদার ১৪ শতাংশ এবং পুরুষদের জন্য ১০ শতাংশ পর্যন্ত সরবরাহ করে থাকে। তা ছাড়া আয়রন ও বায়োটিন রয়েছে এতে।
তথ্যসূত্র: হেলথলাইন
ছবি: হাল ফ্যাশন ও পেকজেলসডটকম