এক্সফোলিয়েটর দুই ধরনের হয়ে থাকে। ফিজিক্যাল ও কেমিক্যাল। এই দুই ধরনের এক্সফোলিয়েটরের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো এদের কাজের ধরন।
একে মেকানিক্যাল এক্সফোলিয়েটর বলা হয়। এ ধরনের এক্সফোলিয়েটরে কিছু দানাদার বা রুক্ষ উপাদান থাকে, যা দিয়ে ঘষে ঘষে ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে পারি আমরা। ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েটর বাজারে যেমন কিনতে পাওয়া যায়, তেমন ঘরে থাকা কিছু উপাদান (কফি, চিনি, লবণ, বেকিং সোডা) দিয়েও বানানো যায়।
নরম ওয়াশক্লথ আর প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম লুফাহও এক ধরনের ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েটর। আবার ঠিক একইভাবে কাজ করে স্ক্রাবার। তবে এটি ক্রিমভিত্তিক পণ্য। ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েটরের চেয়ে স্ক্রাবার কম রুক্ষ হয়ে থাকে। ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েটর কিন্তু সবার জন্য নয়। যাঁদের ত্বক সংবেদনশীল, ব্রণ–প্রবণ আর তৈলাক্ত, তাঁরা এটি এড়িয়ে চলবেন। শুষ্ক ও মিশ্র ত্বকে ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েটর ব্যবহার করা যাবে। তবে তা করতে হবে সতর্কতার সঙ্গে। কারণ, ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েটর ত্বকে সূক্ষ্ম ক্ষত তৈরি করতে পারে। ফলে ত্বকে জ্বালা, ইনফ্ল্যামেশন, দাগছোপ বা হাইপারপিগমেন্টেশন হতে পারে।
গত চার বছরে সৌন্দর্যচর্চায় কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটরের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর হিসেবে বিভিন্ন ধরনের অ্যাসিড ব্যবহার করা হয়। এই অ্যাসিডগুলো খুব কোমলভাবে ত্বকের উপরিপৃষ্ঠ থেকে মৃত কোষ অপসারণ করে।
এ জন্য ডার্মাটোলজিস্টরা সবাইকে কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর তিন ধরনের হয়ে থাকে। এএইচএ বা আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড, বিএইচএ বা বেটা হাইড্রক্সি অ্যাসিড ও পিএইচএ বা পলিহাইড্রক্সি অ্যাসিড। এই অ্যাসিডগুলো বিভিন্ন ধরনের ফল, শাকসবজি বা শস্য থেকে সংগ্রহ করা হয়।
এর মধ্যে আছে সাইট্রিক, গ্লাইকোলিক, ল্যাকটিক, ম্যালিক, ম্যান্ডেলিক, টারটারিক অ্যাসিড। এই অ্যাসিডগুলো ত্বকের মৃত কোষ দূর করার পাশাপাশি কোলাজেনের বৃদ্ধি ঘটায়, হাইপারপিগমেন্টেশন (দাগছোপ, মেছতা) দূর করে, ফাইন লাইনস আর বলিরেখা কমায়।
স্যালিসাইলিক ও লাইপোহাইড্রক্সি অ্যাসিড এ ধরনের। যাঁদের ত্বক অনেক বেশি ব্রণ-প্রবণ, তৈলাক্ত বা ব্ল্যাকহেডসের সমস্যা রয়েছে, তাঁদের জন্য সবচেয়ে ভালো এই অ্যাসিড। এটি ত্বকের একদম গভীরে ঢুকে অতিরিক্ত সিবাম ও ময়লা পরিষ্কার করে।
গ্লুকোনোল্যাকটোন, গ্ল্যাকটোজ, ল্যাকটোবায়োনিক অ্যাসিড এই গোত্রে পড়ে। ডার্মাটোলজিস্টরা পলিহাইড্রক্সি অ্যাসিডকে দ্বিতীয় প্রজন্মের আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড বলেন। যাঁদের ত্বকে ফাইন লাইনস বা বড় রোমকূপ রয়েছে, তাঁরা এটি ব্যবহার করতে পারেন। তবে এ অ্যাসিড সবচেয়ে ভালো শুষ্ক ও সংবেদনশীল ত্বকের জন্য। কারণ, পলিহাইড্রক্সি অ্যাসিড হিউম্যাকট্যান্ট। অর্থাৎ এটা বায়ু থেকে পানি টেনে নিয়ে ত্বক হাইড্রেটেড রাখে। অন্যদিকে যাঁদের ত্বকে ইনফ্ল্যামেশন, চুলকানি, রোজেশিয়া, একজিমার মতো সমস্যা রয়েছে, তাঁদের জন্য এই অ্যাসিড একদম আদর্শ।
এটি এমন একটি পণ্য, যা প্রতিদিন ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। কারণ, এর অতিরিক্ত ব্যবহারে ত্বকের সাংঘাতিক ক্ষতি হবে। ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েটর বা স্ক্রাব সপ্তাহে একবার এবং কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করাই যথেষ্ট। এক্সফোলিয়েটর ব্যবহারের আগে ত্বক ক্লেনজার দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হয়। বেশির ভাগ মানুষ রাতের ত্বকচর্চার রুটিনের অংশ হিসেবে এক্সফোলিয়েশন করে থাকেন। তবে ডার্মাটোলজিস্টদের মতে, আসল সুফল পেতে হলে সকালে এক্সফোলিয়েশন করতে হবে।
যেকোনো ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েটর বা স্ক্রাব ত্বকে মেখে পাঁচ মিনিট ম্যাসাজ করতে হবে। অবশ্যই খুব আলতোভাবে। এরপর ১০ মিনিট রেখে দিতে হবে। শেষে তা হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েটর ব্যবহারের আগে ত্বক হালকা ভেজা রাখা ভালো। পাতলা নরম ওয়াশক্লথ বা ধুন্দলের লুফাহ দিয়ে ত্বকের মৃত কোষ দূর করা যায়। এ জন্য ওয়াশক্লথ বা ধুন্দলের লুফাহ হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে নরম করতে হবে। এরপর সেগুলো ঠান্ডা হয়ে এলে হালকা ভেজা ত্বকে খুব আলতো করে ঘষতে হবে। কোরিয়ানরা অনেক বছর ধরে এই পদ্ধতিতে ত্বকের মৃত কোষ দূর করে আসছে।
কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর কোনোভাবেই ভেজা ত্বকে ব্যবহার করা যাবে না। তাহলে পানি ও অ্যাসিডের বিক্রিয়াতে ত্বকের বারোটা বেজে যাবে। কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর সাধারণত ১০ মিনিটের বেশি ত্বকে লাগিয়ে রাখার নিয়ম নেই। এর বেশি রেখে দিলে ত্বকে কেমিক্যাল বার্ন হবে। তবে সময়ের পরিমাণটা ব্র্যান্ডভেদে ভিন্ন হতে পারে। এ জন্য কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর ব্যবহারের আগে প্যাকেটের গায়ে লেখা নির্দেশনা আগে পড়ে নিতে হবে।
একটি কথা ভালোভাবে মনে রাখবেন, অনেক ব্র্যান্ড বলতে পারে যে তাদের এক্সফোলিয়েটর প্রতিদিন ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু ভুলেও এটা করা যাবে না। ডার্মাটোলজিস্টরা এই ব্যাপারে বিশেষভাবে সতর্ক করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ আলোচিত ও জনপ্রিয় মার্কিন ডার্মাটোলজিস্ট শিরিন ইদ্রিস বলেন, ‘ব্র্যান্ড বা তাদের এক্সফোলিয়েটর যত ভালো মানেরই হোক না কেন, কোনো কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর তিন দিনের বেশি ব্যবহার করা যাবে না। এতে ত্বকের ব্যারিয়ার নষ্ট হয়ে যাবে।’
তথ্যসূত্রঃ এল ম্যাগাজিন, অ্যালিউর
ছবিঃ হালফ্যাশন ও পেকজেলস ডট কম