চর্মরোগবিশেষজ্ঞরা জানান, ফাটা ঠোঁট নিরাময়ে সাহায্য করবে সাদা পেট্রোলিয়াম জেলি, ক্যাস্টর সিড অয়েল, সিরামাইডস, ডাইমেথিকোন, হেম্প সিড অয়েল, মিনারেল অয়েল, পেট্রোলাটাম, সিয়া বাটার, সূর্য প্রতিরক্ষামূলক উপাদান, যেমন টাইটানিয়াম অক্সাইড বা জিংক অক্সাইড। এ ছাড়া সুগন্ধিমুক্ত এবং হাইপো-অ্যালার্জেনিক পণ্য ব্যবহার করলেও ভালো ফল পাওয়া যাবে।
কোনো পণ্য প্রয়োগ করার সময় যদি ঠোঁটে জ্বালাভাব বা অস্বস্তি বোধ হয়, তাহলে সেই পণ্য ব্যবহার করা বন্ধ করা উচিত। একটি নন-ইরিটেটিং লিপ বাম (বা ঠোঁটের ময়েশ্চারাইজার) দিনে কয়েকবার এবং শোবার আগে অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। ঠোঁট যদি খুব শুষ্ক ও ফাটা হয়, তাহলে সাদা পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি মোম বা তেলের চেয়ে বেশি সময় ধরে রাখে ময়েশ্চার।
বাইরে যাওয়ার আগে অবশ্যই এসপিএফ ৩০ বা তার বেশি যুক্ত একটি নন-ইরিটেটিং লিপ বাম লাগান। এমনকি শীতকালেও ঠোঁটকে রোদ থেকে রক্ষা করা জরুরি। সূর্য শুষ্ক, ফাটা ঠোঁটকে আরও সহজে পোড়াতে পারে। ফলে অনেক সময় ঘা হয় ঠোঁটে। তাই এমন লিপ বাম ব্যবহার করা ভালো, যাতে এসপিএফের পরিমাণ বেশি থাকে।
লিপস্টিপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই অ্যালকোহল-ফ্রি লিপস্টিপ বেছে নিতে হবে।
বাড়িতে একটি হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারলে ভালো। এটি বেডরুমে রাখলে শুষ্ক শীতের বাতাসে অনেক প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা যোগ করবে।
চর্মরোগবিশেষজ্ঞরা বলেন, বাইরে থাকাকালে দুই ঘণ্টা অন্তর লিপ বাম লাগানো উচিত। এ ছাড়া প্রচুর পানি পান করতে হবে, যেন ফাটা ঠোঁট হাইড্রেটেড থাকে।
বাজারে বিভিন্ন ধরেন লিপ বাম পাওয়া যায়। ঠোঁটে জ্বালা করে, এমন কোনো পণ্য ব্যবহার করা উচিত নয়। ঠোঁট ফেটে যাওয়ার জন্য কিছু উপাদান এড়ানো উচিত। যেমন, কর্পূর, সুগন্ধি, ল্যানোলিন, মেন্থল, স্যালিসিলিক অ্যাসিড, ফ্লেবারযুক্ত দারুচিনি, সাইট্রাস, পুদিনা এবং পেপারমিন্ট আছে, এমন উপাদানের লিপ বাম শুষ্ক, ফাটা ঠোঁটের জন্য ভালো হবে না।
অনেকের দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ানো কিংবা ঠোঁট শুষ্ক হলে জিব দিয়ে ভেজানোর মতো অভ্যাস রয়েছে। এগুলো তৎক্ষণাৎ স্বাভাবিক মনে হলেও সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। লালা বাষ্পীভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠোঁট শুষ্ক হয়ে যায়। তাই এই বদভ্যাস বন্ধ করতে হবে ।
ঠোঁটকে ধাতব তৈরি জিনিস থেকে দূরে রাখা ভালো। পেপারক্লিপ, গয়না এবং ধাতুর তৈরি অন্যান্য পণ্য সংবেদনশীল ঠোঁটে জ্বালা করতে পারে।
ফাটা ঠোঁটের জন্য বিশেষজ্ঞের এই পরামর্শগুলো অনুসরণ করলে ২ থেকে ৩ সপ্তাহের মধ্যে ভালো ফল পাওয়া সম্ভব। ঠোঁট যাতে পুনরায় না ফাটে, তার জন্য ঘরের ভেতরে বা বাইরে যখনই ঠোঁট শুকিয়ে যাবে, তখনই লিপ বাম ব্যবহার করতে হবে।
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শুষ্ক, ফাটা ঠোঁট নিরাময় না হলে অবশ্যই একজন চর্মরোগবিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে। ঠোঁটের শুষ্কতা আবহাওয়া ছাড়া অন্য কারণেও হতে পারে। অ্যাকটিনিক সাইলাইটিসও হতে পারে। এটি একটি প্রাক্-ক্যানসারাস অবস্থা। ফলে এক বা উভয় ঠোঁট শুষ্ক ও আঁশযুক্ত হয়ে যায়। তাই বেশি বাড়াবাড়ি হলে অবশ্যই চর্মরোগবিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে।
ছবি: হাদী উদ্দীন