বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান প্রথম দশের মধ্যে। ঢাকার আকাশে টাকা উড়ুক আর না উড়ুক, নাইট্রোজেন ডাই–অক্সাইড, সালফার ডাই–অক্সাইড, কার্বন মনোঅক্সাইড, ফ্রি র্যাডিক্যাল উড়বেই। ত্বকের বারোটা বাজানোর জন্য এগুলোর চেয়ে ভালো উপাদান খুব কমই আছে। এদের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বক বাঁচিয়ে রাখা কিন্তু খুব কঠিন কিছু নয়। এবার ত্বক দূষণমুক্ত রাখার উপায়গুলো জেনে নেওয়া যাক—
অ্যান্টি-পলিউশন স্কিনকেয়ারের প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো ডাবল ক্লিনজিং। কে-বিউটি থেকে পাওয়া দুই ধাপে ত্বক পরিষ্কার করার পদ্ধতিটি দূষণের ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে ত্বক রক্ষা করতে বিশেষভাবে কার্যকর। প্রথমে ক্লিনজিং অয়েল বা বাম দিয়ে ত্বক ভালোভাবে ম্যাসাজ করতে হবে। এতে অয়েল-বেসড ইমপিউরিটিসের সঙ্গে মেকআপ, এসপিএফ, সিবাম ও দূষণকারী পদার্থ দূর হয়। শুধু ফেসওয়াশের সাহায্যে এগুলো সহজে পরিষ্কার হয় না। মাইসেলার ওয়াটার দিয়েও কাজটি করা যায়। এরপর ত্বকে লেগে থাকা বাড়তি ধুলা-ময়লা,ঘাম পরিষ্কার করতে ত্বকের ধরন অনুযায়ী ফেসওয়াশ বা ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।
সপ্তাহে অন্তত একবার এক্সফোলিয়েটিং করতে হবে। এতে ত্বক গভীরভাবে পরিষ্কার হয় এবং মৃত কোষ দূর হওয়ার ফলে অন্যান্য স্কিনকেয়ার প্রডাক্ট ত্বকের গভীরে সহজে প্রবেশ করতে পারে। দুই ধরনের এক্সফোলিয়েশন আছে। ফিজিক্যাল ও কেমিক্যাল। কারও স্কিন যদি দূষণের প্রভাবে খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়ে থাকে, তাহলে ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েশন করা যায়। এ ধরনের এক্সফোলিয়েটর বাজার থেকে কিনতে পারা যায়, আবার চাইলে আখরোটের গুঁড়া, চালের গুঁড়া, চিনি, লবণ, কফি—এই প্রাকৃতিক উপাদানগুলোর সঙ্গে যেকোনো ক্যারিয়ার অয়েল মিশিয়ে বানিয়েও নেওয়া যায়। যদি ত্বক অনেক বেশি রুক্ষ, ড্যামেজড হয়ে যায়, তাহলে বেছে নিতে হবে আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড বা বিটা হাইড্রক্সি অ্যাসিড ও নানা রকমের ফ্রুট এনজাইমযুক্ত কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর।
দূষণের ফলে আমাদের শরীরে ফ্রি র্যাডিক্যালের মতো মারাত্মক ক্ষতিকর উপাদান প্রবেশ করে। এটি স্কিন ব্যারিয়ার দুর্বল করে ও কোলাজেন ভেঙে ফেলে। ফলে বয়স ৩০ হওয়ার আগে ত্বকে ফাইন লাইন, রিংকেল, ক্রোস ফিট ও কালো ছোপ ছোপ দাগ দেখা দেয়। এ জন্য স্কিনকেয়ার রুটিনে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যোগ করতে হবে। এটি ফ্রি র্যাডিক্যালের সবচেয়ে বড় শত্রু। স্কিনকেয়ার রুটিনে একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ সিরাম রাখলে ভালো। এটি ফ্রি র্যাডিক্যালের সঙ্গে লড়াই করে, এর হাত থেকে ত্বককে রক্ষা করে এবং সেই সঙ্গে দূষণজনিত কারণে হওয়া ড্যামেজ সারিয়ে তোলে। যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো ত্বকের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো সেগুলো হলো—
ভিটামিন সি, রেটিনল (ভিটামিন এ), ভিটামিন ই, নায়াসিনামাইড, রেযভেরাট্রাল, কোএনজাইমকিউ১০ (CoQ10), পলিফেনলস, ফ্ল্যাভোনয়েডস, ফেরিউলিক অ্যাসিড,
অ্যাস্টাজ্যানথিন, গ্লুটাথিওন ও ময়েশ্চারাইজার।
স্কিন ব্যারিয়ার শক্তিশালী করতে দুই বেলা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করার কোনো বিকল্প নেই। এর ফলে দূষক ত্বকের কোষে সহজে প্রবেশ করতে পারবে না। এ জন্য সেরামাইডস ও হায়ারুলোনিক অ্যাসিড আছে এমন ময়েশ্চারাইজার বেছে নিতে হবে। এর সঙ্গে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান থাকলে আরও ভালো।
কিছু দূষণকারী আছে যারা তাদের ক্ষতিকর প্রভাব প্রয়োগের আগে ইউভি রশ্মি দ্বারা সক্রিয় হয়। তাই প্রতিদিন, এমনকি বর্ষার সময়ও সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। এ জন্য সবচেয়ে ভালো হলো জিংক অক্সাইড বা টাইটেনিয়াম অক্সাইডযুক্ত ফিজিক্যাল মিনারেল সানস্ক্রিন। এর এসপিএফ লেভেল অবশ্যই ৩০ বা তার বেশি হতে হবে।
এসবের পাশাপাশি ডায়েটে প্রোটিন, ভালো ফ্যাট, প্রোবায়োটিক ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে দুই থেকে আড়াই লিটার পানি পান করা ও অন্তত আট ঘণ্টা ঘুমের কথা ভুলে গেলে চলবে না।
ছবি: সাইফুল ইসলাম ও পেকেজেলসডটকম