বাংলা নববর্ষের আগমনী বার্তা শোনা যাচ্ছে। নতুন বছরকে বরণ করে নিতে ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে নানা প্রস্তুতি। এমনই এক আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে গুলশানের বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ পার্কে। আয়োজনের নাম ‘অলিগলি হালখাতা বাংলা নববর্ষ উৎসব ১৪৩২’।
বাংলাদেশের উদারনৈতিক, অসাম্প্রদায়িক ও মানবতাবাদী সংস্কৃতি থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই দ্বিতীয়বারের মতো এ আয়োজন করছেন অলিগলি বন্ধুসভার সদস্যরা। এই বর্ষবরণ নিয়ে বিস্তারিত জানানোর জন্য শুক্রবার বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ পার্কে আয়োজন করা হয় সংবাদ সম্মেলনের।
গুলশান সোসাইটির মহাসচিব সৈয়দ আহসান হাবিবের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য দেন গুলশান সোসাইটির সভাপতি ব্যারিস্টার ওমর সাদাত। তিনি বলেন, বস্তুত ঢাকা দক্ষিণে বর্ষবরণের কোনো আয়োজন হয় না। বরং দক্ষিণ এদিক থেকে এগিয়ে। সে জন্য গত বছর প্রথমবারের মতো এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল গুলশান, বারিধারা, বনানী ও উত্তরা অঞ্চলের মানুষের কথা চিন্তা করে। গতবারের সাফল্য আরও উজ্জীবিত করেছে এবার বৃহৎ পরিসরে আয়োজনে। পাশাপাশি এবারের পয়লা বৈশাখ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিনের আবর্জনা দূর করার প্রত্যয়েই এ আয়োজন।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি উল্লেখ করেন, গাজার মানুষের প্রতি সংহতি প্রকাশের জন্য থাকছে একটি বিশেষ দেওয়াল। সেখানে রাখা হচ্ছে একটা ডোনেশন বাক্সও।
গুলশান সোসাইটির সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক শ্রাবন্তী দত্ত এই আয়োজনের নানা দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘একটা সময় ছিল যখন বাবা–মায়েরা সন্তানদের সৃজনশীল পেশা বেছে নেওয়াটাকে সমর্থন করতেন না। কিন্তু পরিস্থিতি বদলেছে। কিন্তু তার প্রকাশ আমাদের সমাজে ঘটানো এবং শিল্প, শিল্পী ও আমাদের সংস্কৃতির মর্যাদাপূর্ণ কদর নিশ্চিত করার দায়িত্ব থেকেই আমাদের এই উদ্যোগ।’
দুই দিনের অনুষ্ঠানের শুরু চৈত্রসংক্রান্তিতে। ১৩ এপ্রিল বিকেল থেকে চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত। আর পয়লা বৈশাখ সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। দুই দিনের আয়োজনে যা যা থাকছে তার বিস্তারিত জানান অলিগলি বন্ধুগণের বন্ধু ড. নাভিন মুরশিদ।
১৩ এপ্রিল চৈত্রসংক্রান্তিতে শুরু হবে এই বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। প্রথম দিনের আয়োজন শুরু হবে বিকেল চারটা থেকে। এদিনই শুরু হয়ে যাবে মেলা। নাম দেওয়া হয়েছে হাটবাজার। এখানে ৯ ধরনের কারুশিল্পী তাঁদের পসরা সাজিয়ে বসবেন। পাশাপাশি থাকবে দেশি উদ্যোক্তাদের নানা পণ্যের সমাহার। ফুড জোন থাকছে চকবাজার নামে।
রাত আটটায় ইসলাম উদ্দিন পালাকার পরিবেশন করবেন পালাগান। রাত ১০টা থেকে শুরু হবে আলপনা আঁকা—পার্কের সামনে থেকে গুলশান ২ নম্বর চত্বর পর্যন্ত। এই আয়োজনে উপস্থিত থাকবেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। রাস্তাজুড়ে আলপনা আঁকার কর্মসূচিতে অংশ নেবেন সবাই।
১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখে এই আয়োজন শুরু হবে সকাল থেকেই। সকাল সাড়ে আটটায় র্যাচেল প্রিয়াংকা ও তাঁর দলের পরিবেশনায় বর্ষবরণ নৃত্য দিয়ে শুরু হবে এদিনের আয়োজন। এরপর গুলশান সোসাইটির কর্মকর্তা ও অলিগলি-বর্ষবরণ বন্ধুগণের স্বাগত বক্তব্যের পর শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ও অন্তর্বর্তীকালী সরকারের নারী ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।
সকাল ১০টায় গানের পরিবেশনায় থাকছে ‘জলের গান’। পাশাপাশি চলবে বিশিষ্ট শিল্পীদের অংশগ্রহণে চিত্রালাপ।
বেলা ১১টায় সাঈদ ফিরদৌসের সঞ্চালনায় ভাবালাপের প্রথম পর্বে ‘সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ’ শীর্ষক আলাপে অংশ নেবেন সাংবাদিক নূরুল কবীর, সংস্কৃতিজন সারা যাকের, নাট্যব্যক্তিত্ব আফজাল হোসেন ও অধ্যাপক প্রশান্ত ত্রিপুরা। ভাবালাপের দ্বিতীয় পর্বের শিরোনাম ‘ভরদুপুরের গল্পসল্প’। দুপুর ১২টায় ‘জনপরিসরে নারীর উপস্থিতি’ শীর্ষক এই আলোচনায় থাকছেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ব্যারিস্টার শুক্লা সিরাজ, শিক্ষক মিথিলা মাহফুজ ও আদিবাসী অধিকারকর্মী ডালিয়া চাকমা।
বেলা একটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত থাকবে অনুষ্ঠানের বিরতি। তবে মেলা চলমান থাকবে। বিকেল চারটায় পাড়ার শিশুরা মিলে পরিবেশন করবে বিশেষ নৃত্য।
বিকেল সোয়া চারটায় গান পরিবেশনার প্রথম পর্বে থাকবে গানালাপ। এলকেজি স্টুডিওর পরিচালনায় ‘সব সখি মিলি গাই মঙ্গলগান’ শিরোনামের পরিবেশনায় অংশ নেবেন সভ্যতা, সুমেল, আনান, জয়িতা, নাভিন ও লাবিক কামাল। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় থাকছে গানের দল সমগীতের পরিবেশনা। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় সমাপনী পরিবেশনায় বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকছেন বাপ্পা মজুমদার ও দলছুট। দুই দিনের এ আয়োজনের পর্দা নামবে এই পরিবেশনার মধ্য দিয়ে।
চিত্রালাপ সম্পর্কে বিস্তারিত জানান অলিগলি বন্ধুগণের বন্ধু অমিতি কুণ্ডু। তিনি বলেন, দেশের প্রথিতযশা ১২ জন শিল্পী এই আর্টক্যাম্পে উপস্থিত থাকছেন। চিত্রশিল্পীরা হলেন ফরিদা জামান, কনক চাঁপা চাকমা, শিশির ভট্টাচার্য, জামাল আহমেদ, মোহাম্মদ ইউনুস, আহম্মেদ শামসুদ্দোহা, শেখ আফজাল, মোহাম্মদ ইকবাল, বীরেন সোম, আনিসুজ্জামান ও বিশ্বজিৎ গোস্বামী। তাঁরা সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত থাকবেন এবং ক্যানভাস ভরিয়ে তুলবেন ষড়ঋতুর মাধুর্যে।
হাটবাজার ও চকবাজার সম্পর্কে জানান অলিগলি বন্ধুগণের বন্ধু শেখ সাইফুর রহমান। তিনি বলে, হাটবাজারে থাকছে ২০টি স্টল। এর মধ্যে ৯টি থাকছে কারুশিল্পীদের জন্য বরাদ্দ। ৯টি কারুশিল্প মাধ্যমের শিল্পীরা উপস্থিত থাকবেন। এই মাধ্যমগুলো হলো জামদানি, বেনারসি, সুতার হাতপাখা, কাঠের পণ্য, মাটির পণ্য, খেলনা, শীতলপাটি, বাস্কেট ও সুজনি কাঁথা। তাঁরা সবাই এখানে হাতেকলমে কাজ করবেন। আবার তাঁদের পণ্যও বিক্রি হবে। দুটি তাঁতও বোনা হচ্ছে। বাকি স্টলগুলোতে থাকবে দেশীয় উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন ধরনের পণ্য। আর চকবাজারে (ফুড জোন) থাকছে ২০টি স্টল। সেখানেও নানা ধরন ও স্বাদের খাবার পাওয়া যাবে।
বাচ্চাদের জন্য থাকছে আলাদা আয়োজন। সেখানে তাদের খেলাধুলার আকর্ষণীয় সব ব্যবস্থা আছে।
আলাপ, আড্ডা, আলপনা ও গানে ভরপুর এই উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে গুলশান সোসাইটির উদ্যোগে। আয়োজন সুসম্পন্ন করার জন্য আছেন অলিগলি বর্ষবরণ বন্ধুরা। বিশেষভাবে সহযোগিতা করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এ ছাড়া আয়োজনের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আছে ইউসিবি ব্যাংক ও এশিয়ান পেইন্টস। পার্টনার হিসেবে আছে মোজো, বিকাশ, মার্সিডিজ বেঞ্জ, কনকর্ড, পোলার, ফিনলে, ফাইভ আর–সিকিউরেক্স কনসোর্টিয়াম ও ব্র্যান্ড কার্ট।
ছবি: অলিগলি বন্ধুগণ