ভালো থাকার জন্য শারীরিক সুস্থতার চেয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্যকে। মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি সামগ্রিকভাবে ব্যক্তিগত ও সামাজিক পর্যায়ে বিপর্যয় আনে, যার প্রভাব থেকে যায় লম্বা সময় ধরে। এ ক্ষেত্রে বিশেষ করে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের যুগে যেসব তরুণকে নেটিজেনরা অনুসরণ করে, তাঁদের ভূমিকা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সাজিয়া ওমর একজন ইয়োগিনি, লেখিকা, অ্যাকটিভিস্ট ও কাউন্সেলর।
শারীরিক সুস্থতার মাধ্যমে আশপাশের সবাইকে ভালো রাখার জন্য দুই দশকের বেশি সময় ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। গড়ে তুলেছেন ঢাকা ফ্লো নামের প্ল্যাটফর্ম। বিভিন্ন ধরনের আয়োজন নিয়ে সারা বছর প্রশিক্ষণ, সিম্পোজিয়াম, ফিটনেস ফেয়ার আর আলোচনার আয়োজন করে থাকে ঢাকা ফ্লো। এবার নির্বাচিত ২০ জন ইনফুয়েন্সারকে নিয়ে ঢাকার অদূরে টাঙ্গাইলের সিগাল রিসোর্ট ও স্পা ভিলেজে আয়োজন করা হয় ‘ওয়ারিয়র উইদিন—ওয়েলনেস ফর অল’ শিরোনামে দিনব্যাপী ওয়ার্কশপের।
এখানে অংশ নেন সংগীতশিল্পী আরমিন মুসা ও ওয়াহিদা হুসাইন, মডেল ও অভিনেত্রী সারাহ আলম, জনপ্রিয় নৃত্যশিল্পী হৃদি শেখ, ফিটনেস এক্সপার্ট রাওয়ান চৌধুরী, বক্সার ও ফ্যাশন ডিজাইনার নিশাত খান, কার্টুনিস্ট মোরশেদ মিশু, কন্টেন্ট ক্রিয়েটর–টক ব্লগ,'ম্যাজিক রাজিক', রাকিন আবসার, মালিহা, আফরিন, সাবেক মিসেস বাংলাদেশ মুনজারিন অবনীসহ অনেকেই। প্রথম সেশনটিতে মনকে ভালো রাখা নিয়ে আলোচনা পরিচালনা করেন সাজিয়া ওমর।
মানসিক অবসাদ কীভাবে তরুণদের আত্মহননের পথে নিয়ে যাচ্ছে, তা নিয়ে একটি আইটেম, এরপর রাশিচক্রের চারটি উপাদান পানি, বায়ু, অগ্নি ও ধরা—এই চার দলে অংশগ্রহণকারীদের দলগত আলোচনার জন্য ভাগ করে দেওয়া হয়। বিভিন্ন দলে ছিলেন ঢাকা ফ্লো–এর বাকি চার সদস্য তেহসিন, তাসিন, পিউ ও আম্বরীন। কী কী কারণে তরুণেরা অবসাদে আক্রান্ত হন, তা নিয়ে কথা হয়। একাকিত্ব, এডিএইচডি (অল্টারনেটিভ ডিফিকাল্ট হাইপার অ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার), আত্মবিশ্বাসের অভাবসহ অনেক বিষয় উঠে আসে কথায় কথায়। সবশেষে এই অবক্ষয় রোধে সুস্থ মানসিক বিকাশে মিডিয়া, স্কুল, ইনফ্লুয়েন্সার ও করপোরেটদের ভূমিকা নিয়ে ব্রেনস্টর্মিং এবং আলোচনা করা হয়। এই তরুণদের মাধ্যমে মানসিকভাবে সুস্থ থাকার বার্তা পৌঁছে দেওয়াই ছিল এই সেশনের মূল উদ্দেশ্য।
এরপর ইয়োগিনি সাজিয়া ওমর একটি ইয়োগা সেশন পরিচালনা করেন, যেখানে নিজের শরীরের ভেতরের শক্তিকে শাণিত করে মানসিক ও শারীরিকভাবে কীভাবে আরও সবল থাকা যায়, এ নিয়ে আলোচনা করা হয়। এই সেশনে ঢাকা ফ্লোর নিজস্ব প্রোটিন বার ‘ফ্লো বারের’ সঙ্গে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।
সন্ধ্যায় আয়োজন করা হয় ভিন্ন রকমের ইমারসিভ চক্র চ্যান্টিং, যেখানে সংগীতের মাধ্যমে গভীর ধ্যানে নিয়ে যাওয়া হয় সবাইকে। এই সেশনটির শেষে ছিল রাতের খাবার। খোলা আকাশের নিচে মোমের আলোয় মায়াবী পরিবেশে খাবারের আয়োজন। প্রত্যেকের জন্য টেবিলে গাছের পাতায় নাম লিখে রাতের খাবার পরিবেশন করা হয়।
বিশেষ মেনুতে সেকরাল চক্র, হার্ট চক্র,থ্রোট চক্র, তৃতীয় নয়ন চক্র, ক্রাউন চক্র—এমন নামে সম্পূর্ণ ভেজিটেরিয়ান খাবার পরিবেশন করা হয়। প্রতি বেলায় ভেজিটেরিয়ান খাবার পরিবেশনার এই বিষয়টি মানুষকে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে উদ্যোগী করার একটি প্রয়াস বলে জানান ঢাকা ফ্লোর তেহসিন। এরপরই হিমেল আবহাওয়ায় একটু উষ্ণতা পেতে আয়োজন করা হয় বন ফায়ার আর ব্লাইন্ড ফোল্ড নাচের।
পরদিন সকাল শুরু হয় গতকালের সেশনের মূল্যায়ন দিয়ে, যেখানে মানসিকভাবে সুস্থ থাকা ও অবসাদগ্রস্ত কাউকে কীভাবে সাহায্য করা যায়, সেই বিষয়ে সবার মতামত নেওয়া হয়। একটি অভিনব জার্নালিং সেশনের মাধ্যমে জীবনের সমস্যাগুলোকে নিয়ে নিজের চিন্তা কীভাবে লিখে ফেলা যায়, সেই বিষয়ে একটি সেশন পরিচালনা করা হয়। অবশেষে ক্যানসারজয়ী কানাডিয়ান নাগরিক জো পরিচালনা করেন একটি মেডিটেশন সেশনের। সকালের নাশতার মাধ্যমে শেষ হয় এই আয়োজনটি। অংশগ্রহণকারী অনেকেই বলেন, জীবন নিয়ে চিন্তা করা, সব নেতিবাচকতাকে দূরে সরিয়ে অন্যের পাশে দাঁড়িয়ে ইতিবাচক শক্তি নিয়ে কীভাবে আরও সুন্দরভাবে বাঁচা যায়, সেই অনুপ্রেরণা তাঁরা পেয়েছেন এই অনুষ্ঠানে।
আয়োজনটির পৃষ্ঠপোষক খিসেবে রয়েছে কাজী অ্যান্ড কাজী টি, মিনিসো বাংলাদেশ, নিউ ফার্মা বাংলাদেশ, দৌড়, বহু, জিরো ক্যাল, প্রিফি, ট্রাক নিবো, সি গাল। মিডিয়া পার্টনার হিসেবে ছিল প্রথম আলো, ডেইলি স্টার আর হাল ফ্যাশন। ঢাকা ফ্লোর সহপ্রতিষ্ঠাতা আম্বরীন বলেন, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য পাঁচ লাখ টাকার তহবিল গঠনে একটি মেলার আয়োজন করতে যাচ্ছেন তাঁরা। বছরব্যাপী বিভিন্ন আয়োজন নিয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে কাজ করে যেতে চায় ঢাকা ফ্লো।
ছবি: হাল ফ্যাশন